Science

সৌর ঝড়-এর আগাম বার্তা! CMEs গবেষোণায় এক ধাপ এগিয়ে গেল বিজ্ঞানী মহল

SHARE
সৌর ঝড়
2003 সালে তোলা এই ছবিট। এর শক্তি এতটাই ছিল যে সেন্সরের ফিউজ নষ্ট হয়ে যায়। Credit-NASA

সৌর ঝড় কী?

           উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুতে মহাজাগতিক রশ্মিগুলি যখন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে তখন যে আলো ছটা তৈরি হয়, তাই হলো মেরুজ্যোতি। এই মেরুজ্যতির জন্য বেশিরভাগ মহাজাগতিক রশ্মিগুলি সূর্য থেকেই আসে। কিন্তু যদি সূর্য থেকে আগত মহাজাগতিক রশ্মির পরিমাণ খুব বেশি হয়ে যায় তাহলে তাকে সৌর ঝড় (solar storm) বলে।  এর প্রভাব গোটা সৌরজগতে হতে পারে। পৃথিবীতে এর প্রভাবটা বেশি হবে। বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গোটা পৃথিবী আজ ট্রানসফরমার ও ইলেকট্রনিক্স গেজেট দিয়ে পরিপূর্ণ। সৌর ঝড় যদি একবার পৃথিবীতে আঘাত আনে এর পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা আন্দাজ করা মুশকিল।

Coronal Mass Ejections (CME)

          সূর্যের করোনা থেকে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ আহিত কণা নির্গত হাওয়াকে বলা হয় coronal mass ejections (CMEs)। CMEs-এর নির্গমন সূর্য থেকে যেকোনো দিকে হতে পারে এবং এর প্রভাব যে কোনো গ্রহেই হতে পারে। তবে এর বেগ আলোর তুলনায়  অনেকটাই কম। ফলে এর উৎপত্তির  কারণ সঠিকভাবে জানা গেলে আগাম সতর্কতা নেওয়া সম্ভব।

          প্রথম CME রেকর্ড করা হয় 1971 সালের 14ই ডিসেম্বর নাসার  Seventh Orbiting Solar Observatory (OSO-7) থেকে। এটা পর্যবেক্ষণ করার পরে CMEs-এর তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এরপরে 1995 সালে The Solar and Heliospheric Observatory পাঠানো হয় এই সূর্যের করোনা স্তর সম্পর্কে আরো জানার জন্য।

Cosmic Ray Air Shower

        উচ্চ শক্তিসম্পন্ন (1020 eV) কোনো মহাজাগতিক কণা যখন বায়ুমন্ডলে অবস্থিত কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসের সঙ্গে ধাক্কা খায় তখন সেটি শৃঙ্খল বিক্রিয়ার মাধ্যমে অসংখ্য কণার ধারা সৃষ্টি করে। এত পাইওন, মেসন, কেওন ইত্যাদি কণার সৃষ্টি হয়। অনেকটা ফোয়ারার মতো। একে Cosmic Ray Air Shower বলা হয়। যখন পৃথিবীতে সূর্য থেকে আগত CMEs আঘার হাতে তখন এই Cosmic Ray Air shower-এর পরিমাণ খুব বেড়ে যায়।

      এটিও গোটা পৃথিবীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও ব্যাহত করতে পারে। তাছাড়া এটি স্পেস স্টেশনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কম্পিউটারের তথ্য স্টোর করে রাখা হার্ড ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। 

       সেজন্য সৌর ঝড়ের আগাম বার্তা কীভাবে পাওয়া যায় তা নিয়ে গবেষণা করে চলেছে। সৌর বিজ্ঞানীর ক্রমাগত সূর্যের গতিবিধির ওপর নজর রেখে চলেছেন‌ যে কী কারণে CMEs তৈরি হয়।

CME-এর বেগ

       সূর্যের প্লাজমার যে অংশে চৌম্বকক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে প্রবল সেখানে সৌর ঝড় সৃষ্টি হ‌ওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সূর্যের মধ্যে অবস্থিত শক্তিশালী চৌম্বক বলরেখা মোচড় খেতে খেতে একসময় আলাদা হয়ে যায় এবং একটি লুপ তৈরি করে। এই লুপের মধ্যে সঙ্গে আহিত কণার মেঘ আবদ্ধ থাকে। এটি CMEs সৃষ্টি করে। CMEs -এর বেগ 250 km/s থেকে শুরু করে 3000 km/s ও হতে পারে। 

      CMEs তে সাধারণত উচ্চ শক্তি সম্পন্ন প্রোটন ও ইলেকট্রন থাকে। গড়ে প্রায় 1012 kg পদার্থ নির্গত হতে দেখা যায়। এর থেকে বেশিও হতে পারে। কারণ এটি 2D লেখচিত্র দেখে অনুমান করা হয়েছে।

গবেষণায় নতুন তথ্য

         Aberystwyth University এর পদার্থবিদ তথা সূর্য বিজ্ঞানী Harshita Ghandhi সৌর ঝড় নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ও তার দল লক্ষ্য করেছেন  সূর্যের গায়ে যে জায়গায় চৌম্বকক্ষেত্র সবচেয়ে শক্তিশালী যেখান থেকে CMEs নির্গত হয়। চৌম্বক বলরেখাগুলি ক্রমাগত পাক খেতে থাকে এবং এক সঙ্গে লুপ থেকে আলাদা হয়ে যায়। ঠিক এই সময় আহিত ও উত্তপ্ত কণার নির্গমন হয়। যেটাকে CMEs বলা হচ্ছে। পদার্থবিদ Harshita Ghandhi গবেষণা করছেন কীভাবে উচ্চতার সাথে চৌম্বকক্ষেত্র অস্থির হয়ে পরে এবং CMEs নির্গমন হয়। এই উচ্চতার নাম দেওয়া হয়েছে 'critical height'।  তাদের মতে উচ্চতার সাথে চৌম্বকক্ষেত্র কীভাবে অস্থির হয়ে যাচ্ছে সেটা জানা গেলে একটি মডেল তৈরি করা সম্ভব যার দ্বারা CMEs নির্গমনের পূর্বাভাস জানা যাবে এবং 3D-তে CMEs-এর প্রকৃত গতিবেগ জানা সম্ভব। ফলে পৃথিবীতে সৌর ঝড় আঁছড়ে পরার আগাম সর্তকতা নেওয়া সম্ভব হবে।  যার ফলে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে সংরক্ষিত করা সম্ভব হবে।

সৌর কলঙ্ক

        সূর্যের গায়ের কোনো অংশে হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যায়; তাহলে পৃথিবী থেকে এই অংশগুলিকে দেখলে অন্ধকার মনে হবে। কিন্তু আসলে এগুলি অন্ধকার নয়। তাপমাত্রার বিশাল পার্থক্যের জন্য আমাদের চোখে এই অংশগুলিকে অন্ধকার হিসেবে ধরে নেয়। এটি হল সৌর কলঙ্ক। প্রতি 11 বছর পর পর সূর্যের গায়ের এই সৌর কলঙ্কগুলি লক্ষ্য করা যায়। তার মানে এই নয় যে এই মাঝের সময়ে সূর্যের মধ্যে কোনো চৌম্বকীয় গতিবিধি তৈরি হয় না। 

এই বছরের (2024) মে মাসে প্রথম সপ্তাহে, বড় আকারের  Solar Flares হয় এবং পৃথিবীতে পৌঁছালে সবচেয়ে শক্তিশালী সৌর ঝড় তৈরি করে  যা বিগত কুড়ি বছরে সবচেয়ে শক্তিশালীর মধ্যে একটি ছিল। 7 থেকে 11 মে-এর মধ্যে সাতটি সৌর ঝড় পৃথিবীতে আঁছড়ে পরে।

সৌর ঝড়
গত 7ই মে, 2024-এ দক্ষিণ কলম্বিয়াতে আঁছেড়ে পরা সৌর ঝড়ের চিত্র। ক্রেডিট-NASA/Mara Johnson-Groh

        1889 সালের 13ই মার্চ এইরকম ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় সৌর ঝড় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল নিয়ে আছে পরে। যার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় মেরুজ্যোতি লক্ষ্য করা যায়। সেই সময় এখনকার মত বৈদ্যুতিক গ্রিড না থাকায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এখন যদি এই রকমের সৌর ঝড় পৃথিবীতে আঁছড়ে পরে তাহলে কিন্তু এক বিশাল দুর্যোগ দেখা দেবে।

 

      ভবিষ্যতে মানুষ যখন চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে বসবাস করবে তখন সেখানকার বসতিকে সৌর ঝড়ের থেকে রক্ষা করার জন্য এই গবেষণা খুব কাজে দেবে।

তথ্য সূত্র-

https://phys.org/news/2024-08-solar-storms-sun.html?utm_source=nwletter&utm_medium=email&utm_campaign=daily-nwletter

https://science.nasa.gov/science-research/heliophysics/how-nasa-tracked-the-most-intense-solar-storm-in-decades/

https://scholar.google.com/citations?view_op=view_citation&hl=en&user=NDTppZ0AAAAJ&citation_for_view=NDTppZ0AAAAJ:qjMakFHDy7sC

 

আরোও পড়ুন↓

SHARE

Related Posts

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার 2023

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার 2023- “Attosecond Laser Pulse” আবিষ্কার!! কারা পেলেন??

প্রকাশিত হল 2023 সালের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম।             পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার 2023-এর প্রাপকরা হলেন Anne L’Huillier, Pierre Agostini, Ferenc…

প্লাজমা- পদার্থের চতুর্থ অবস্থা

          কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়- এই হল পদার্থের তিনটি অবস্থা। তবে পদার্থের আরও একটি অবস্থা আছে; এই চতুর্থ অবস্থাটি হল প্লাজমা।  নামটা শুনে হয়তো…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
2258 2264 2331 2267 2261 2254 2243 2234 2231 2228 2225 2222 2349