মহাকাশ

বুধ গ্রহ – সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহের আবিষ্কার ও অভিযান

SHARE

     সৌরজগতের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ হল বুধ। সবচেয়ে ছোটোও বটে। আমরা এই গ্রহটির সম্পর্কে শুধু এতটুকুই জানি। আসুন; এর সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

বুধের গঠন

     সূর্য থেকে বুধ গ্রহের গড় দূরত্ব 5 কোটি 20 লক্ষ কিমি। প্রতি সেকেন্ডে 47 কিমি বেগে  সূর্যের চারপাশে পাক খায় এবং এর জন্য সময় নেয় 88 দিন। সূর্যের খুব কাছে থাকার জন্য এর ওপর সূর্যের মহাকর্ষ বল অনেক বেশি। তাই নিজের অক্ষের  চারপাশে এক বার ঘুরতে 116 দিন সময় নেয়। দিনের বেলা এই গ্রহের পৃষ্ঠে তাপমাত্রা হয় 400⁰C ও রাতে -180⁰C পর্যন্ত নেমে যায়।
     পাথুরে গ্রহটির ব্যসার্ধ 2440 কিমি যা পৃথিবীর ব্যাসার্ধের 38% এবং এটি চাঁদের তুলনায় সামান্য বড়। আকারে ছোটো হওয়ায় বস্তুর ওজন এখানে কম। পৃথিবীতে 1 কেজি বস্তুর ওজন বুধ গ্রহে হবে 370 গ্রামের সমান। 

ইতিহাসের পাতায় বুধ

       ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় বুধ গ্রহকে 'নাবু' বলা হত।  তখন থেকে মানুষ বুঝতে পেরেছে এটি সূর্যের চারপাশে পাক খায়। 1631 সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি তার আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ এর সাহায্যে বুধ গ্রহকে লক্ষ্য করেন। সূর্যের খুব কাছে থাকার জন্য এই গ্রহটির পর্যক্ষেণ করা কঠিন। বর্তমানের শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে বুধকে দেখতে হলেও অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা হয়। সূর্যের তীব্র আলোর জন্য টেলিস্কোপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তার সঙ্গে চোখের সমস্যা হতে পারে।

    বুধে অভিযান

1962 থেকে 1973 সাল পর্যন্ত NASA মেরিনার নামে 10 টি প্রোব উৎক্ষেপণ করে। এদের কাজ ছিল সৌর জগতের গ্রহগুলির সম্পর্কে জানা। এদের মধ্যে 10 নম্বরটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় বুধ গ্রহকে 3 বার পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়। তখন কিছু ছবি তোলা গিয়েছিল।

মেরিনার 10 থেকে তোলা বুধ গ্রহের প্রসেসিং করা ছবি।
মেরিনার 10 থেকে তোলা বুধ গ্রহের প্রসেসিং করা ছবি। মসৃণ অংশটি তোলা সম্ভব হয়নি

     European Space Agency (ESA) এবং Japan Aerospace Exploration Agency (JAXA) এর সম্মিলিত একটি অভিযান Bepicolombo 2025 সালে বুধের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে।

     2011 থেকে 2015 সাল পর্যন্ত নাসার MESSENGER প্রোব বুধকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। এই সময় আরো কিছু ছবি তোলা হয়েছিল।

     এটা মনে করা হয় বুধের কাছে যাওয়ার চেয়ে  প্লুটো গ্রহের যাওয়াতে কম শক্তির প্রয়োজন হয়। এর কারণ একটাই। সূর্যের প্রবল আকর্ষণ। সূর্যের আকর্ষণকে উপেক্ষা করে বুধের চারপাশে কোনো স্যাটেলাইটকে প্রদক্ষিণ করাতে অনেক শক্তির প্রয়োজন। আর সেই জন্যই হয়তো বুধের কোনো উপগ্রহ নেই। আর যদি থেকে থাকত সূর্য তা গিলে নিয়েছে।  

 অন্য রকমের কক্ষপথ বুধের

     1666 সালে নিউটন বিখ্যাত মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেন। এর দ্বারা গ্রহ-উপগ্রহের গতিবিধি গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা যেত।  তবে সমস্যা দেখা যায় বুধের কক্ষপথ নিয়ে। উপবৃত্তাকার কক্ষপথটি প্রত্যেক আবর্তনের পরে  সরে যেতে থাকে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক-

     সমস্ত গ্রহ; নক্ষত্রের চারপাশে উপবৃত্তাকার পথে আবর্তন করে। নক্ষত্রটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথের ফোকাসে অবস্থান করে এবং গ্রহটি কখনও নক্ষত্র থেকে দূরে চলে যায় (অপসূর) আবার কখনও কাছে চলে আসে (অনুসূর)। একইভাবেন বুধ যখন সূর্যের চারপাশে ঘোরে তখন দেখা যায় প্রতি আবর্তনে বুধের অনুসূর অবস্থানটি সরে যাচ্ছে।

বুধের উপবৃত্তাকার কক্ষপথ যা প্রতি আবর্তনে একটু করে সরে যায়
প্রদক্ষিণরত বুধের উপবৃত্তাকার কক্ষপথ যা প্রতি আবর্তনে একটু করে সরে যায়।

    পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া যায়; পৃথিবীর সাপেক্ষে বুধের কক্ষপথ প্রতি একশ বছরে 5600" (1"=1/3600 ডিগ্রি) সরে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিউটনের সূত্র ও অন্যান্য গ্রহগুলির আকর্ষণ জনিত প্রভাব হিসাব করে প্রাপ্ত তাত্ত্বিক মান হল- প্রতি একশ বছরে 5557"। অর্থাৎ 43" এর তফাত। হয়তো এটা খুব কম মনে হচ্ছে। কিন্তু মহাকাশের মাপকাঠিতে এটা একটা বিশাল ত্রুটি। 

এর ব্যাখ্যা দেবার চেস্টা করে Urbain Le Verrieইনি আবার নেপচুন গ্রহের উপস্তিতির ইঙ্গিত দেন। যেটা 1846 সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী Johann Gottfried Galle পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আবিষ্কার করেন। যাই হোক; এই Urbain Le Verrie বুধের অদ্ভুত কক্ষপথের জন্য আরেকটি গ্রহ কল্পনা করেন যেটা বুধ ও সূর্যের মাঝে অবস্থিত। এটার নাম দেন ভল্কান। যদিও পরবর্তীতে অনেক খোজাখুজির পরেও এই ভল্কান গ্রহের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় নি। 

         বুধের কক্ষপথ সংক্রান্ত সমস্যাটি পরে সমাধান হয় 1915 সালে আইন্সটাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দিয়ে। এই তত্ত্ব অনুসারে সূর্যের বিশাল ভরের জন্য আশেপাশের spacetime  বেঁকে যায়। এর ফলে বুধের কক্ষপথ প্রতিবছর একটু করে সরে যায়।

আরও পড়ুন-

SHARE

Related Posts

চন্দ্রযান ৩

চন্দ্রযান ৩ এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ

উৎক্ষেপণ হয়- 14ই জুলাই, 2023 পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকে – 14ই  জুলাই থেকে 1লা আগস্ট, 2023 পৃথিবীর কক্ষ ছেঁড়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় – 1লা আগস্ট, 2023 চাঁদের…

চন্দ্রযান-৩

চন্দ্রযান-৩। ব্যর্থতা ভুলে ভারতের আরেকটি অভিযান

                   দিনটা ছিল 6ই সেপ্টেম্বর, 2019। চন্দ্রযান-2 অভিযান শেষ মুহুর্তে গিয়ে ব্যর্থ হয়। সমগ্র ভারতবাসীর কাছে ছিল একটি দঃখের দিন।…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!